শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ১২:৫৭ অপরাহ্ন

News Headline :
ভারতে চিকিৎসা সেবায় সুযোগ সুবিধা প্রদানে যৌথ সভা  অবৈধভাবে চাল মজুদ রাখার অভিযােগে আবারো মিল মালিককে জরিমানা উন্নত মানের কম্বল পেয়ে খুশি দরিদ্র মানুষেরা এক হাজার দরিদ্র মানুষকে শীতবস্ত্র প্রদান করলেন বিজিএমিইএ’র সভাপতি প্রশাসনে বদলীর নির্দেশনায় ঠাকুরগাঁওয়ের চার ওসি, দুই ইউএনও জনপ্রিয় নেতা আলী আসলাম জুয়েলকে নৌকার মাঝি হিসেবে পেতে মড়িয়া ভোটাররা তারেক পাকিস্তান থেকে লোক পাঠিয়ে নৈরাজ্য চালাচ্ছে শান্তি সমাবেশে -যুবলীগ নেতা জুয়েল ঠাকুরগাঁওয়ে স্বাস্থ্য সচেতনতায় ফ্রি ডেন্টাল ক্যাম্পেইন টাকার অভাবে চিকিৎসা বন্ধ সাংবাদিক আইনুলের লজ্জা থাকলে আ’লীগে যোগ দিন বিএনপির উদ্দেশ্যে যুবলীগ নেতা-আলী আসলাম জুয়েল

নাগরিক ভাবনাঃ টিসিবির জন্য সোসাল ডিসট্যান্সিং কি ব্যর্থ হবে ?

বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্যব্যের মূল্য বাড়লে সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবি ডিলারের মাধ্যমে খোলা বাজারে মালামাল বিক্রি করে। এটা অনেক দিন ধরে চালু আছে , করোনা সমস্যার মধ্যে ত তো থাকবেই , গোটা রমজানেও চালু থাকবে। তবে এবারের প্রেক্ষিতটা একটু আলাদা। এবারে লাইন ধরা বা মালামাল সংগ্রহের জন্য কিছু জরুরী পূর্বশর্ত আছে। যেমন মুখে মাস্ক লাগাতে হবে , আর কমপক্ষে ৩ ফুট দুরে দাঁড়াতে হবে। অর্থাৎ কোন ভাবেই গায়ে গায়ে লাগবেনা। সরকারের উদ্দেশ্যটা মহৎ তবে ডিলারের ব্যবস্থাপনা অসম্ভব ত্রæটিপূর্ন ও ঝুঁকিপূর্ণ। গত ১৮ এপ্রিল ব্রাহ্মনবাড়িয়ায় খেলাফত মজলিশের নেতার মৃত্যুতে জানাজা হয়েছিল। সেই জানাজায় ৫০ হাজার কারো মতে লক্ষাধিক জনতার সমাগম ঘটেছিল। বিষয়টি উদ্বেগজনক। কেননা এখানে এতো লোকের মধ্যে করোনার জীবানু বহণকারী কেউ কেউ থাকতেও পারে। তারা কারো না কারো সাথে মিশেছে। যাবার সময় হাত মোসাফাহ করেছে। এতো মানুষের হাত ধোয়ার ইচ্ছা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। আবার আবেগও কাজ করেছে। জানাজায় অংশগ্রহণকবারীরা হাসরের মাঠে বেহেস্তে যাওয়ার বিষয়ে নিশ্চয় হুজুরের সুপারিশ প্রত্যাশা করতেই পারেন। এভাবেই তাদের মানষিকভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে একমাত্র রসুলুল্লাহ (সাঃ) ছাড়া হাসরের মাঠে আর কারো সৃুপারিশ করার ক্ষমতা নাই। যারা এসেছিলেন তারা ঠেলাঠেলি করে হুজুরের মুখটা শেষ বারের মতো দেখার চেষ্টা করেছেন। তার পর ফিরে গেছেন। এখন কত জন করোনার ভাইরাস সংগ্রহ করে নিয়ে গেলেন এবং তারা আবার ফিরে গিয়ে নিজ এলাকায় কতজনের কাছে বিতরণ করে কি সর্বনাশ করবেন এটা জানতে আরো কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে। পুলিশ ও প্রশাসনের ভাষ্য অনুসারে জানাজায় মানুষ এসেছিল হঠাৎ করেই যা নিয়ন্ত্রন করা তাদের পক্ষে সম্ভব ছিলনা। পুলিশ এবং প্রশাসন মিনমিনে গলায় এসব কথাই বলার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তারা যদি সতর্ক থাকতেন চেষ্টা এবং কৌশল করতেন তাহলে কিছু একটা করা যেতো। তা কেউ করার চেষ্টা করেননি , তারা নিজেরা নিরাপদ থেকেছেন। জানাজার ব্যপারটা ২/৫ মিনিটে ঘটেনি। যেহেতু রাজনৈতিক দলের নেতা মারা গেছেন একটা শো ডাউনও করা দরকার। ফেসবুকে মোবাইল ফোনে বিষয়টি নিয়ে জামাতের আমির বিছু নির্দেশনা দিয়েছেন সেটা ভাইরাল হয়েছে। সে কারনেও জানাজাটা করা হয়েছে দেরীতে। দলীয় ক্ষমতার প্রমান হাজির করা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ ও প্রশাসন সক্রিয় থাকলে প্রয়োজনে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট থেকে সেনা সদস্যদের তলব করে রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে কিছুটা কম ক্ষতির কারন তো হতে পারতো। জানাজা শেষে তারা ফিরে গেছেন। তদন্ত হচ্ছে। তদন্ত শেষে বলা হবে এই করা লাগতো , সেই করা লাগতো , অমুক দায়ী। পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি। প্রশাসন নির্বিকার ছিল। বড়জোর ২/৪ জনের হয়তো চাকুরীর জায়গা বদলী হবে।
জানাজা হয়েছে ১ দিন। সর্বনাশটা যা হবার তা হয়েছে। বর্তমান সময়ে আমরা সবাই মিলে নিয়ম করে যে সর্বনাশটা করছি এর জবাবটা কে দিবে। ঠাকুরগাঁও জেলা লকডাউন ঘোষনা করা হয়েছে। প্রশাসনিক কর্মকর্তা , পুলিশ , সেনাবাহিনী , ডিসি এসপি সবাই মিলে চেষ্টা চলছে মানুষ যাতে নিজ নিজ বাড়ীতে থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা , রেডিও টিভি , মিডিয়া কর্মী , খবরের কাগজ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ডাক্তার বিশেষজ্ঞ সবাই মানুষকে নিজ নিজ বাড়ীতে থাকার আহবান জানাচ্ছেন। আর প্রশাসন প্রতিদিন ঠাকুরগাঁও পৌরসভায় ১২০০০ মানুষের সমাগম ঘটানোর সুযোগ করে দিয়েছেন। এই ঘটনাটা ঘটছে টিসিবি ডিলারের অদক্ষতার কারনে। মনে রাখতে হবে এবারের টিসিবির মালামাল বিক্রির উদ্যেশ্যটা আলাদা। শুধু বাজার নিয়ন্ত্রনই নয় , লকডাউনের কারনে সব বাড়ীতে খাবার পৌঁছানো সম্ভব নয়। আবার কারো কেনার সামর্থ আছে কিন্তু লকডাউনের কারণে বাড়ী থেকে বের হতে পারেনা। এ ক্ষেত্রে পারসোনাল ডিসট্যান্সিং বাজায় রেখে মালামাল বিক্রি নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু মালামাল বিক্রির জায়গায় সামান্যতম ডিসটেন্স মানার কোন সুযোগ নেই , ব্যবস্থাও নেই। আমি বলছি টিসিবির খাদ্যদ্রব্য বিক্রয়ের কথা। ২০ এপ্রিল বড় মাঠে দেখতে গিয়েছিলাম। ইচ্ছা ছিল সম্ভব হলে ২/১ কেজি বুট , ১ লিটার তেল , ১ কেজি চিনি নিয়ে আসব। কিন্তু শ্লিপ যোগাড় করা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। এই অবস্থা থাকলে কোনদিন সম্ভব হবেওনা। সেখানে ২ জাতের সমস্যা ক) শ্লিপ যিনি দিচ্ছেন তার টেবিলের সামনে প্রচন্ত ভীড়। ৩ ফুট তো অনেক দুরের কথা ৩ ইঞ্চি দুরত্বও নাই। শ্লিপ পাওয়ার জন্য কিযে ঠেলাঠেলি। এখানে করোনা ভাইরাস ট্রান্সমিট হওয়ার উপযুক্ত ক্ষেত্র, আবার ট্রাকের কাছে যেখানে মালামাল আছে সেখানে ভিড়। শ্লিপধারীগণ সবাই সমপরিমানের ক্রেতা নন। একেকজন একেক পরিমান জিনিষের শ্লিপ কিনেছে। এসব মালামাল আবার মিলিয়ে দিতে সময় ক্ষেপন হচ্ছে। সেখানে আবার আর এক ঠেলাঠেলি। এর মধ্যে কিছু মানুষ ভীড় করছে যারা শ্লিপ যোগাড় করতে পারেনি। তারা শুধু ভীড়ই বাড়াচ্ছে। আর ছুটাছুটি করছে যদি একটা শ্লিপ যোগাড় করা যায়। কোন কাজেরই কোন সিরিয়াল নাই। সব সময় মানুষের একটা ঢেউয়ের মতো মনে হচ্ছে। এর পর আবার আর একটা বিষয় নজরে পড়লো তা হলো বড় মাঠের আশে পাশে কিছু মানুষের বসবাস। এদের কোন কাজ নাই। এরা প্রতিদিনি শ্লিপ সংগ্রহ করে। আবার কিছু বেশী মান্যগণ্য আছেন , যারা অধিক পরিচিত আছেন তাদের শ্লিপ সর্বোচ্য পরিমান। অর্থ্যাৎ তারা সব জিনিষই সর্বোচ্য পরিমান কিনবে। কেউ ২টা ৩ টা শ্লিপ যোগাড় করেছে। ফলে দুরের মানুষ আসতে আসতে শ্লিপ শেষ হয়ে যায়। আবার কিছু শ্লিপ ডিলারের লোকের কাছে রয়ে যাচ্ছে বলে অনেকে সন্দেহ এবং অভিযোগ করছেন। এখানে একজন ট্যাগ অফিসার আছেন তার কি কাজ , ডিলারের কি কাজ , কে কিসের লোক তাতো বোঝার কোন উপায় নাই। মোটামুটি সবার মুথে মাস্ক। আর্মি , পুলিশ , ডিলারের লোক , ক্রেতা লোকজন সবাই বলছে লাইন হও , লাইন হও , কিন্তু লাইন করে কারা, কার কমান্ডে বিষয়টি পরিচালিত হচ্ছে সেটা বোঝার কোন উপায় নাই। কেউই চেষ্টার ত্রæটি করছেননা। কিন্তু বাস্তবায়ন করা যাচ্ছেনা। কারন তাদেরতো আলাদা পোশাক নাই। সাংবাদিকরা সংবাদ সংগ্রহ করছেন। সবাই একটা বিষয় স্বীকার করেছেন দুরত্ব মানা যতই জরুরী হোক সেটা কোনভাবেই মানা হচ্ছেনা এবং মানার কোন উপায়ও নাই।এটাই সর্বনাশের কারণ। এখন মৌলিক প্রশ্ন হলো এর যদি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা করা না যায় তাহলে এটা তাৎক্ষনিকভাবে বন্ধ করে দিতে হবে। একদিকে মানুষকে ঘরে থাকার জন্য অনুরোধ , নির্দেশ, বাধ্য করা হচ্ছে আবার প্রতিদিন প্রশাসনের জানার বাইরে আর ঝুঁকিপুর্ণ ব্যবস্থায় টিসিবির মালামাল বিক্রির সময় প্রতিদিন ২৪ টি ডিলারের কাছে কমপক্ষে ১২০০০ মানুষকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছি। আগামী ১০ দিন এই টিসিবির মালামাল বিক্রি চালু থাকলে লক্ষাধিক মানুষের সমাবেশ হবে। কোয়ারেন্টাইন বা লকডাউন কোন কাজে আসবেনা। ৫০ হাজার মতান্তরে ১ লাখ মানুষকে কয়েকঘন্টায় এক জানাজায় যোগদানের জন্য সকল পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। পরবর্র্তীতে টিসিবির মালামাল বিক্রির এই ব্যবস্থাপনা পরিবর্তন করেেত না পারলে সকল জেলার প্রশাসক, পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করতে হবে। প্রত্যাহারেতো ভাইরাস থেমে থাকবেনা।

এখনতো হাতে কাজ নাই। বয়স্ক হবার কারণে ঝুঁকি বেশী সে কারণে স্বেছাসেবামুলক কাজে অংশগ্রহণটা কমে গেছে। তবে অভিজ্ঞতার আলোকে পরামর্শ দেওয়া যায়। ইগো বাদ দিয়ে পরামর্শ গ্রহণ করলে বা বিষয়টির চুলচেরা বিশ্লেষন করে পদক্ষেপ নিলে কাজটা সহজ হবে , অভিযোগ কম হবে , ডিলারও মালামাল বিতরণ করে সুবিধা পাবে। সর্বোপরি পারসোনাল ডিসট্যান্সিংটা মেনে চলা যাবে।

প্রস্তাব হলো

ক) মালামালের ১টা প্যাকেজ থাকবে। অর্থাৎ চিনি , চাল ,ডাল ,তেল , ছোলা ইত্যাদি যা যা দেওয়া হচ্ছে তার এমন একটা পরিমান নির্ধারণ করা হবে যার দাম হবে ২০০ অথবা ৩০০ টাকা। অল্প টাকার প্যাকেজ হলে ভিআইপি ক্রেতাদের ভীড় কম হবে। বেশী মানুষকে দেওয়া যাবে।

খ) ডিলার আগেই ব্যাগে করে পলিথিনে আলাদা আলাদা মালামালের প্যাকেট করে , এক ব্যাগে প্যাকেট করে গাড়ীতে সাজিয়ে রাখবে।

গ) যতজনকে দেওয়া যাবে ততগুলো শ্লিপ করা হবে। শ্লিপ বিতরণের জন্য ৫/৬ টা জায়গা করতে হবে। শ্লিপ ক্রেতারা ২০০ অথবা ৩০০ টাকা করে আনবে। কোন রকম চেঞ্জ দেওয়া হবেনা। এক হাতে টাকা গ্রহণ অন্য হাত শ্লিপ প্রদান। সর্বোচ্য ১০ মিনিটের মধ্যে এই কাজটা হয়ে যাবে। দীর্ঘক্ষণ শ্লিপ বিতরণের বিষয় চালু রাখা যাবেনা।

ঘ) ট্রাক থেকে মালামালের ব্যাগ বিতরণ হবে । একহাতে শ্লিপ নেবে এক হাতে ব্যাগ দিবে। ্প্রাপকরা লাইনে নয় অর্ধ বৃত্তাকারে ৩ ফুট করে দুরে দাঁড়াবে। অর্ধ বৃত্তাকারে দাঁড়ানোর জন্য ফেষ্টুন পুঁতে দিতে হবে। এই দাঁড়ানোর বিষয়টা কড়াকড়ি ভাবে নিয়ন্ত্রন করতে হবে সবাই মিলে। এই ভাবে বিতরণ করতেও ২০ মিনিটের বেশী সময় লাগবেনা।

ঙ) এই আয়োজন করলে কোন অভিযোগ উঠার সুযোগ কমে যাবে। স্বচ্ছতা আসবে। অল্প সময়ের মধ্যে বিতরণ শেষ হয়ে যাবে। সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা সহজ হবে।

চ) যে সকল ডিলার নিয়োগ করা হয়েছে। তাদের প্রতিনিধি , পুলিশ . প্রয়োজনে কয়েকজন করে রোভার স্কাউট নিয়ে ১ ঘন্টার এটা ব্রিফিং ট্রেনিং আয়োজন করলে কাজটা সহজেই করা যাবে।

ছ) যে লোক একদিন নিবে তার ২ হাতে দৃশ্যমান জায়গায় অমোচনীয় কালি জাতীয় একটা কিছু লাগিয়ে দিতে হবে। যাতে তিনি নিয়মিত ভীড় না করেন।

জ) ট্রাকের সাথে একটা করে হ্যান্ড মাইক থাকবে। ট্যাগ অফিসার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিবেন।

ঝ) সিসিবির মালামাল বিক্রি বা সরবরাহের সাথে জড়িতরা একটা বিশেষ জ্যাকেট পড়বে। হতে পারে ট্রাফিক পুলিশরা যেমন পড়ে তেমনি জ্যাকেট। পুলিশ , আর্মিরতো ড্রেস আছেই। রোভারদেরও ড্রেস আছে। তাহলে নিয়ন্ত্রনটা সহজ হবে।

ঞ) আগে লোক এসে শ্লিপ যোগাড় করবে তারপরে নিরাপত্তার দায়িত্বে লোক আসবে তা নয় , আগে নিরাপত্তার সকল লোক নিজ নিজি দায়িত্বে দাঁড়িয়ে যাবে তার পর শ্লিপ বিতরণ সহ অন্যান্য কার্যক্রম শুরু হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

© News Net 24 BD All rights reserved 2019
Design & Developed BY Hostitbd.Com